বছর দুই-তিন আগের কথা, একটা ছোট গল্প সদ্য লেখা শেষ করে বসে বসে ভাবছি এবার কী করা যায়! রহস্য রোমাঞ্চ, অলৌকিক, ভৌতিক, সামাজিক বিভিন্ন ধাঁচের লেখা বেশ কিছু তো লিখলাম, এবার?

কী করা যায়! কী লেখা যায়!

ভাবতে ভাবতেই চোখ গেল আমার বছর সাতেকের ছেলের দিকে। সে তখন মোবাইলে গেম খেলতে ব্যস্ত। এই ছেলেকে আমি হাজার চেষ্টা করেও কিছুতেই গল্পের বইদের সাথে দোস্তি করাতে পারিনি। যতবার বইয়ের দোকানে গিয়েছি, যতবার বইমেলায় গিয়েছি ওর বয়সের সাথে সাযুজ্য রেখে বই কিনে এনেছি। এমনকি ট্রেনের হকার দাদাদের কাছ থেকেও হরেক রকম মজাদার বই এনে তাকে গেলানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনও বইই সে হজম করবে কি চেখেও দেখেনি! বোম্বাগড়ের রাজা বা কাতুকুতুর বুড়োর থেকে অনেক বেশি সে স্বচ্ছন্দ বোধ করে ডোরেমন,সিনচ্যান,ছোটা ভীমদের সাথে সময় কাটাতে।

ওর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই মনে হল আচ্ছা একখানা ছোটদের রহস্য উপন্যাস লিখলে কেমন হয় আর সেই উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রে যদি আমার ছেলেই থাকে তাহলেই বা কেমন হবে ব্যাপারটা! ও কি তাহলে উৎসাহ পাবে গল্পটা পড়তে? এইভাবে কি ওকে টেনে আনা যাবে গল্পের বইয়ের জগতে?

এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের সাথে নিজেই চ্যালেঞ্জটা নিয়ে নিলাম।

মোবাইলের কি-প্যাডে আরেকবার জন্ম নিল আমার আত্মজ, রিঙ্গো। তাকে বানিয়ে ফেললাম ক্লাস ফোরের এক ক্ষুদে গোয়েন্দা। কিন্তু ঐটুকু পুঁচকে রিঙ্গো সে একা একা আর কত কীই বা করবে! তার সহচর,সহচরীও তো দরকার। ব্যাস আর ভাবতে হলনা, ওরই সাথে জন্মালো আরো দু’জন, পুতুন ও কার্টুন। আদতে এই দুজন হল আসল রিঙ্গোর আসল মাসতুতো দাদা এবং জেঠতুতো দিদি। এই সব নামকরণ বাস্তবেই আমার করা।

প্লট ভাবতে গিয়ে এই তিনজনের হাত ধরাধরি করে এলো অন্তু ও ঝিন্টি। এই শেষের দুজন কিন্তু প্রকৃত অর্থেই আমার কলমজাত।

প্রথম গল্প, সুদর্শন রহস্য দিয়ে শুরু হল এইসব কচিকাঁচা গোয়েন্দাবর্গের পথচলা।

সুদর্শন রহস্যের খানিকটা করে লিখি আর আসল রিঙ্গোকে সেটা পড়ে শোনাই। সে তো নিজেকে এবং তার দাদা,দিদিকে গল্পে পেয়ে আহ্লাদে আটখানা! প্রবল উৎসাহে শুনতে থাকে গল্প আর তার থেকে উৎসাহ পেয়ে আমিও দ্বিগুণ আনন্দে লিখতে থাকি।

একটা সময় যখন ‘সুদর্শন রহস্য’ শেষ হল তখন রিঙ্গো বায়না ধরলো এরকম আরো গল্প তার চাই। ততদিনে এই গল্প তার মুখস্থ হয়ে গিয়েছে।

অগত্যা তার আবদার রাখতে সায়েন্স ফিকশনের উপর ভর করে এবার শুরু করলাম দ্বিতীয় উপন্যাসিকা, ‘কাজিরাঙ্গার জঙ্গলে’।

সেটাও যখন তার গলাধঃকরণ হয়ে গেল তখন তৃতীয় গল্প ‘বিশে বিষ’-এর পালা এলো।

এভাবেই কখন যে এই বালক,বালিকা,কিশোর,কিশোরীদের গল্প একটা সিরিজের আকার নিয়ে নিয়েছে তা আমি নিজেই বুঝিনি।

বাংলা সাহিত্যে বরেণ্য লেখকদের কালজয়ী কিশোর রহস্য উপন্যাস অনেক আছে। তারাই আমার আশৈশব, আকৈশোর বিরাজ করেছে। তাদের ধারে কাছে ঘেঁষার দুঃসাধ্য প্রচেষ্টা আমি কখনো করিনি এবং সে দুঃসাহস যেন আমার কখনো না হয়। আমি এই উপন্যাসিকাগুলো লিখেছি শুধুমাত্র নিজের লেখার আনন্দে।

পাঁচজন ক্ষুদের অভিযান তিনটি প্লটে এক মলাটের ভেতর স্থান পেয়েছে বলে এই বইয়ের নাম রেখেছি ‘পাঁচ এক্কে তিন’। ‘পাঁচ এক্কে তিন' বইয়ের আকারে আসতোই না যদি না ভাই অনির্বাণ ব্যানার্জি এটি প্রকাশের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতো।

আমি তাই এই ভাইটির কাছে চির কৃতজ্ঞ।

তিন নম্বর গল্প শেষ হওয়া ইস্তক রিঙ্গো চতুর্থটির জন্য আগাম বায়না দিয়ে রেখেছে। কিন্তু এই সিরিজ ঠিক কতদূর এগোবে তা পাঠকবন্ধুদের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে।

সব গল্পের শেষে আসল কথা বলে আসলে পাঠক সমাজ।

তাদের মুখের দিকে চেয়েই পাঁচ এক্কে তিনের পরবর্তী সংখ্যার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।