বিশ্বাসঘাতকগুলোকে মারতে যে বড় ভালো লাগে তার। কোথাও যেন মনে মনে একটা আত্মশ্লাঘা অনুভব করে সে! তার নিজের জীবনের সেই বিশ্বাসঘাতকদের একজনকেও তো শাস্তি দেওয়া হল না আজ পর্যন্ত, তাই হয়তো অন‍্যের জীবনের বিশ্বাসঘাতকদের নিজের হাতে শেষ করে একটা অদ্ভুত আনন্দ পায় সুপারি কিলার নীল বর্মা! হ‍্যাঁ, মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের বাসিন্দারা এই নামেই চেনে ওকে!

কিন্তু, এই নীল বর্মার ভয়ঙ্কর খুনীর খোলসের আড়ালে হয়তো আজও বাস করে সেই বোকা ছেলেটা—যে একদিন নোংরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে, সবার চোখে খারাপ সেজে, নিজের মা-বাবা এমনকি কৈশোরের প্রেমকেও বিসর্জন দিয়ে এ শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল! ঘটনাচক্রে যে কখনও আবার সেই শহরেই তাকে ফিরতে হবে তা কোনওদিন ভাবতে পারেনি নীল বর্মা! না না! নীল বর্মা তো না—সে যে জয়—জয় চ‍্যাটার্জী! যে সত্তাটাকে সে নিজেই আজ ভুলে গেছে!

কিন্তু এই পুরনো শহরের মায়ায়, তার অলি-গলি-রাজপথে উদ্ ভ্রান্তের মতো হাঁটতে হাঁটতে কাকে খুঁজে ফিরছে ও? মৃত মা-বাবাকে? নির্মমভাবে প্রত‍্যাখ‍্যান করা প্রেমিকা জয়িতাকে? নাকি, জয় চ‍্যাটার্জীকেই? যাকে একদিন ও ফেলে গিয়েছিল এই কলকাতা শহরের বুকে? থেকে থেকে কেন মনের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে সেই হারিয়ে ফেলা সমস্ত কিছুকে ফিরে পাওয়ার বাসনা?

তবে, চাইলেই তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না! তাদের এই অন্ধকার জগতে একবার পা রাখলে যে ক্রমশ সিঁড়ি বেয়ে নীচেই নেমে যেতে হয়! এতটাই নীচে, যে সেখান থেকে আলোর আভাসটুকুও পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে! অন্তরায় আছে আরও একজন। সে হল দেবী—যার আগ্রাসী আকাঙ্ক্ষাকে এতকাল ধরে তীব্রভাবে প্রত‍্যাখ‍্যান করে এসেছে সে—শুধুমাত্র জয়িতাকে ভুলতে না পারার কারণে!

হ‍্যাঁ জয়িতা… যে জয়িতা একদিন তাকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছিল! আজও সেই জয়িতাই তার একমাত্র প্রেম! আনন্দেও যাকে মনে পড়ে… আবার দুঃখেও যার নামটাই মুখে আসে বারবার!

আর আছেন স‍্যারজি! যাঁর অভিধানে ‘গদ্দারি’ শব্দটাই নেই! কারণ, কোনও গদ্দারকেই তো তিনি এক মুহূর্তও বাঁচিয়ে রাখেন না!

কিন্তু মন? এত রক্ত… এত নৃশংসতাও জয় চ‍্যাটার্জীর যে মনটাকে আজও মেরে ফেলতে পারেনি! আছে… আজও যে সেই মনটা বেঁচে আছে…. যে মন চায় শুধু ভালোবাসতে!

গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপন করে থাকা সুপারি কিলার নীল বর্মার জীবনটা হঠাৎই এক রাত্রিতে কেমন যেন বদলে গেল! চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল তার জীবনটাকে তছনছ করে দেওয়া ষড়যন্ত্রকারীর আসল উদ্দেশ্যটা! কী করবে এবার জয়? প্রতিশোধ নেবে? এখন প্রতিশোধ নেওয়াটা তো নীল বর্মার কাছে বাঁ হাতের খেলা! জাস্ট তর্জনী আর ট্রিগারের একটা হালকা চাপ মাত্র! কিন্তু তার প্রতিশোধের উদ‍্যত অস্ত্রকে থমকে যেতে হল—কারণ, সামনে এসে যে দাঁড়িয়েছে তার আবাল‍্যের প্রেম!

নীল বর্মা কি কোনওদিনও আবার ফিরে পাবে তার হারিয়ে ফেলা সত্তাকে? নাকি, রক্তের দাগ আর বারুদের গন্ধে এবার চিরতরে হারিয়ে যাবে জয় চ‍্যাটার্জী নামক সত্তাটাই? জানতে গেলে পড়তে হবে টানটান উত্তেজনা আর নস্টালজিয়ায় ভরপুর রোমান্টিক থ্রিলারধর্মী উপন্যাস — “ছায়াপথ”।